মহা ঝামেলা তো! কোথায় পাবো আইডিয়া? কত মানুষ কত কিছু করে সফল হচ্ছে। সবাই একেকটা ইউনিক আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে। আমিও তো চাই উদ্যোক্তা হতে, কিন্তু ইউনিক আইডিয়া কোথায় পাবো? এই সমস্যা একজন দুইজন না, অনেকেরই আছে। আর সত্যি বলতে একটা ইউনিক আইডিয়া খুজে বের করা যে কতটা কঠিন সেটা যে খুজে সেই জানে। আপনি যদি একটা ইউনিক আইডিয়া খুজে বের করতে গিয়ে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটান, সারারাত অনলাইনে ঘাটাঘাটি করেন, দিন রাত সারাক্ষণ মাথায় বিজনেস আইডিয়া কিলবিল করে, চোখের সামনে যা দেখেন তাই নিয়েই বিজনেস করলে কেমন হয় চিন্তা করেন, তাহলে হ্যা আপনার দ্বারা সম্ভব।
উদ্যোক্তা হতে চাই
আপনিই খুজে বের করতে পারবেন একটা ইউনিক আইডিয়া।আচ্ছা, উদ্যোক্তা তো হতে চাইলাম, কিন্তু উদ্যোক্তা বলতে আসলে কি বোঝায়? কখন একটা মানুষকে উদ্যোক্তা বলে? কেন একজন বিজনেসম্যান মাত্রই উদ্যোক্তা নয়? উদ্যোক্তা হচ্ছে সেই ব্যাক্তি, যে নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে মানুষের কোন সমস্যার সমাধান করে এবং সেইসাথে এই সমাধানের মাধ্যমে নিজেও কিছু আয় করার উপায় বের করে ফেলে। ঘুরায়ে প্যাচায়ে কি বল্লাম কিচ্ছু বুঝলাম না আসেন একটু সহজ করে বলি। দু-একটা উদাহরণ দেই।স্বল্প দূরত্বের পথ পাড়ি দেয়ার জন্য আমার গাড়ি প্রয়োজন। কিন্তু যারা কার/মাইক্রো ভাড়া দেয় তারা তো এতটুকু পথের জন্য গাড়ি দিবেনা! আবার রহিম সাহেব নিজের প্রাইভেট কারে চড়ে প্রতিদিন অফিসে যান।
সারাদিন গাড়িটা অফিসের গ্যারেজেই পড়ে থাকে। উবার করলো কি, নিয়ে এলো রাইড শেয়ারিং সার্ভিস। আমার সমস্যাও সমাধান হল, রহিম সাহেবেরও গাড়িটা দিয়ে কিছু আয় হল, মাঝখান থেকে উবারও কিছু লাভ করে নিলো। ঢাকা শহরের জ্যাম থেকে বাঁচার উপায় খুজতে আমি যখন কাহিল, তখন কিছু বাইকের মালিক কাহিল বাইকের খরচ টানতে। সমাধান নিয়ে এলো পাঠাও। আমিও খুশি, বাইকের মালিকও খুশি, পাঠাও ও খুশি।আমার কিছু বই কেনা দরকার কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। খোজ নিয়ে জানতে পারলাম পাওয়া যাবে ঢাকার নীলক্ষেতে। কিন্তু আমিতো থাকি ঝিনাইদহ তে, বই কিভাবে পাবো? সমাধান নিয়ে এলো রকমারী ডটকম, ঘরে বসেই পেয়ে গেলাম আমার বই। আবার, পাড়ার মোড়ে আনারস বিক্রি হচ্ছে।
আমার খুব খেতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু আনারস কেনো, বাসায় আনো, কাটো, মাখাও, তারপর খাও! এত ঝামেলা কে করবে! আমার মতো অলস মানুষদের কথা চিন্তা করে বেকার ছেলেটা একটা ভ্যান নিয়ে বসে গেল, সুন্দর করে কেটে, মশলা দিয়ে মাখিয়ে আনারস বিক্রি করতে লাগলো। ব্যাস, আমি খুব খুশি । আবার সেই ছেলেটাও আর বেকার থাকলো না! এতক্ষণে আশা করি বুঝে গেছেন কি বলতে চাচ্ছি। এই যে আইডিয়া গুলা দিয়ে উবার, পাঠাও, রকমারী কিংবা বেকার ছেলেটা আমাদের সমস্যা সমাধান করে দিলো, সেই সাথে নিজেরাও ব্যবসা করে নিলো, এটাই হচ্ছে পারফেক্ট একটা উদ্যোগ। উবার, পাঠাও, রকমারীর যে মালিক, বা ঐ বেকার ছেলেটা, তাকেও আমরা বলতে পারি একজন উদ্যোক্তা। অর্থাৎ, উদ্যোক্তা হতে হলে করণীয়…
১. মানুষের সমস্যা সমাধান করতে হবে বা মানুষের উপকার হয় এমন কিছু করতে হবে
২. সম্পূর্ণ নিজের ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে করতে হবে
৩. নিজেকেও কিছু আয় করতে হবে
এই তিনটা কাজ করতে পারলেই বলতে পারব, হ্যা আমি একজন উদ্যোক্তা। এবার তো জানলাম উদ্যোক্তা কাকে বলে। কিন্তু একজন বিজনেসম্যান চিন্তা করে শুধু পন্য সংগ্রহ করে বিক্রয় করা ও লাভ-লসের কথা। কাজেই সকল উদ্যোক্তা একেকজন বিজনেসম্যান হলেও সকল বিজনেসম্যান কিন্তু মোটেও উদ্যোক্তা নয়।
কেন উদ্যোক্তা হতে চাই
তো আমরা যদি একজন উদ্যোক্তা হতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে একটা ইউনিক আইডিয়া খুজে বের করতে হবে যা দিয়ে উপরের তিনটা বিষয়ই অর্জন করা সম্ভব। চিন্তার কিছু নাই, এই আইডিয়া পেতে হলে বছরের পর বছর ধ্যান করার প্রয়োজন নাই, কিংবা আলাদিনের জাদুর প্রদীপেরও প্রয়োজন নাই। এই আইডিয়া বের করতে দরকার শুধু একটু কৌশল আর একটু পরিশ্রম। সাথে ধৈর্য্যটা থাকলে কিন্তু মন্দ হয়না, পেয়েও যেতে পারেন সোনার হরিন
এরকম একটা আইডিয়া পেতে হলে প্রথমেই নিজের সমস্যা গুলি খুজে বের করতে হবে যেগুলা আপনি দৈনন্দিন জীবনে ফেস করেন। তারপর মানুষের সাথে মিশতে হবে। হ্যা, মানুষের সাথে কথা বলতে হবে, মানুষের সমস্যা জানতে হবে। আপনার গ্রাম বা আপনার শহরেই নতুন কিছু করার আইডিয়া পেয়ে যাবেন মানুষের সমস্যা খুজতে গেলে। প্রয়োজনে ৫০-১০০ জন মানুষের কাছে জানতে চান, যে একান্তই ব্যাক্তিগত সমস্যা বাদ দিয়ে, দৈনন্দিন জীবনে সাধারণত তারা কি কি সমস্যার সম্মুখীন হন?
যত বড় এরিয়া নিয়ে কাজ করতে চান তত বেশি মানুষের কাছে প্রশ্ন করুন। একেকজন একেক রকম জবাব দিবে। কিন্তু তারপরও দেখবেন অনেক গুলি কমন সমস্যা পেয়ে যাবেন যা কিনা অনেকেই ফেস করে। এবার সেই সমস্যা গুলি নিয়ে রিসার্চ করুন। কিভাবে সেগুলির কোন একটির সহজ সমাধানের উপায় বের করা যায়, আবার এর মাধ্যমে নিজেও লাভবান হওয়া যায়। ব্যাস, সহজেই পেয়ে যাবেন আপনার সোনার হরিন নামক ইউনিক আইডিয়া!
আর একবার আইডিয়া পেয়ে গেলে বসে থাকা কেন? সাহস করে একদিন শুরুটা করেই দিন না! দেখবেন ঠিক এক পা দু পা করে এগিয়ে যেতে থাকবেন। এরপর শুধু চাই ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকা। কি, পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। কেন পারবেন না, আপনার যে জন্মই হয়েছে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য! এই বিশ্বাসটা থাকলেই হয়, আর কে আটকায় আপনাকে! শত বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে সাফল্যের চূড়ায় দাড়িয়ে একদিন আপনি ঠিক একটা গল্প লিখবেন। সুর স্বর ছন্দে শব্দের রঙিন বুননে মনের সকল মাধুরি মিশিয়ে সেদিন আপনি সোনার অক্ষরে নিজের সফলতার গল্প লিখবেন।